এপ্রিকট খাওয়ার উপকারিতাঃ
এপ্রিকট (Apricot), বাংলায় একে খুবানি বলা হয়। হলদে-কমলা রংয়ের এই ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমন উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন। এটি প্রধানত চীনে উৎপন্ন হত। বর্তমানে অ্যামেরিকাতে এর বিস্তৃতি ব্যাপক।
এপ্রিকট মিষ্টি ও কটু স্বাদযুক্ত হয়ে থাকে। এতে ক্যালরি ও ফ্যাট এর পরিমান কম হলেও এতে প্রচুর পরিমানে রয়েছে ভিটামিন এ এবং সি। এতে আরো পাওয়া যাবে প্রোটিন,ফাইবার,পটাসিয়াম,ভিটামিন ই এর মত পুষ্টি উপাদান। আসুন গোলাকার ছোট এই পুষ্টিকর ফলটির স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নেয়া যাক।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত রাখা জরুরি। সেজন্য প্রয়োজন খাবার নির্বাচনের সময় এমন খাবার বেছে নেয়া যা আপনার দেহে শক্তি যোগাবে সাথে সাথে শর্করা লেভেলও থাকবে ঠিক।
এপ্রিকটে ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এতে কার্বস ও ক্যালরির পরিমান কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী।
দৃষ্টি ক্ষমতা বাড়ায়
বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সকলের চোখে চশমা। গুটিকতক মানুষ ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করলেও অধিকাংশই দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এর কারন প্রতিদিনের খাদ্যে করোটিনয়েডস ও ভিটামিন এ এর মত উপাদানের অভাব।
এপ্রিকটে বিদ্যমান করোটিনয়েডস ও জেন্থফিল বয়সের সাথে সম্পর্কিত চক্ষু রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। আবার এর ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
সমসময় স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা বাঙালির জন্য কঠিন। তাই প্রায়শই পরতে হয় হজমজনিত সমস্যায়।
নিয়মিত এপ্রিকট আপনাকে এহেন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে। এর উচ্চ ফাইবার আপনার হজমে সহায়তা করবে। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের ফাঁপা ভাব দূর করবে।
লিভার সুরক্ষা নিশ্চিত করে
মানবদেহের দ্বিতীয় বৃহৎ অঙ্গ লিভার। লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট লিভার প্রদাহের কারন হতে পারে। যার ফলবসত লিভার ডেমেজ হতে পারে।
এপ্রিকট ফ্যাটি লিভার রোগ হতে রক্ষা করে। এছাড়াও লিভার রিজেনারেশনও প্রভাবিত করে।
এপ্রিকট (Apricot) ওজন কমাতে সাহায্য করে
অতিরিক্ত ওজন বয়ে আনে নানা শারীরিক ব্যাধি। স্থুলতার সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক চাপ বা হতাশার প্রবনতাও দেখা যায়। তাই সুস্বাস্থ্য হোক বা মানসিক প্রশান্তি দুয়ের জন্যই প্রয়োজন ওজন হ্রাস করা।
এপ্রিকট খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট পরিপূর্ণ থাকে। ফলে ক্ষুধার প্রবনতা কমে আসে যা আপনার ওজন হ্রাসের যাত্রাকে আরো সহজ করে দেয়।
অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা
এপ্রিকটে মজুত আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে এবং রক্তের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করে।
হাড়ের গঠনে সাহায্য করে
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে হাড় ক্ষয়ের প্রভাব দেখা যায়। জয়েন্টে সমস্যা তো লেগেই থাকে। এর কারন মূলত ক্যালসিয়ামের অভাব।
এপ্রিকট ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। হাড়ে ক্যালসিয়াম সঠিক শোষণে সহায়তা করে পটাসিয়াম। এপ্রিকটে পাওয়া যাবে এই পুষ্টি উপাদানটিও। এটি আপনার হাড়ের কাঠামো শক্তিশালী করবে এবং হাড় ক্ষয় রোধ করবে।
শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষা
অ্যাজমা বা হাঁপানির মত শ্বসনতন্ত্রের রোগে অনেকেই ভুগে থাকেন। এরসাথে ঠান্ডা বা ফ্লু এর মত সমস্যা তো আছেই। এক গবেষণায় দেখা যায়, ফ্লাভিনয়েড হাঁপানি সমস্যা সমাধান করতে পারে।
এপ্রিকটে উপস্থিত ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মতো কাজ করে এবং ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই প্রক্রিয়াটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঠান্ডা এবং ফ্লুর মতো সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে।
আবার এপ্রিকটের বিটা ক্যারোটিন জ্বরের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।
গর্ভকালীন পুষ্টিচাহিদা পূরণে
গর্ভকালীন সময়ে মা ও শিশুর সুস্থ্যতার জন্য বাড়ে যায় পুষ্টিচাহিদা। তাই এ সময়ে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন।এপ্রিকট একটি উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন ফল।
গর্ভকালীন সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান হল কপার ও আয়রন। যা মিলবে সুস্বাদু এই এপ্রিকটে।
ত্বকের পরিচর্যায়
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারনে প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে। আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিকিরন, সানবার্ন, মেলানিনের অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি স্কিন ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগের জন্ম দিতে পারে।
তবে ভয়ের কিছু নেই। সঠিক খাদ্যাভাসের মাধ্যমে এহেন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলা সম্ভব। এন্টিঅক্সিডেন্টপূর্ণ আহার আপনার ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম। এপ্রিকটে আছে ভিটামিন ই ও সি,যা সুস্থ ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি ত্বকের ইউভি প্রদাহ কমায় এবং অন্যান্য ক্ষতি হ্রাস করে।
এছাড়াও ভিটামিন ত্বকে কেলাজেন উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। আরো আছে বিটা ক্যারোটিন, আাপনার ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করবে।
Apricot এপ্রিকট এর উপকারিতা / এপ্রিকট ফলের উপকারিতা কথা বলে শেষ কারা যাবে না। অভূতপূর্ব এই ফলটি আপনার ডায়েটে সংযুক্ত করে গ্রহন করুন এর অসাধারণ সব উপকারিতা।